প্রতিটি ধর্মই তার অনুসারীদের কাছ থেকে একটা জিনিস চায়। নতুন অনুসারী তৈরি করা। যিশুর ১২জন অনুসারী, মোসেসের অনুসারী, মোহাম্মদের অনুসারী…এভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলে আসছে নতুন অনুসারী বানানোর কাজ। যার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে বাচ্চা জন্ম দেয়া।
প্রতিটি ধর্মই সমাজে হেজেমনি সৃষ্টি করতে চায়। তারা চায় তারাই যেন সংখ্যায় বেশি হয়। তারাই যেন আইন-কানুন, রাষ্ট্রপরিচালনা ইত্যাদির দায়িত্বে থাকে। ডানপন্থীরা এক্ষেত্রে ধর্মীয় ব্যবস্থার বন্ধু। ডানপন্থীরা চায় মানুষে যেন গোত্রবদ্ধ হিসাবে থাকে। আর সেসব গোত্র পরিচালনার জন্য নিয়ম প্রয়োজন। সেসব নিয়ম আসে ধর্ম থেকে।
ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো বেশিরভাগই ধর্মাশ্রিত দল হয়। বাংলাদেশের জামাত বিএনপি, ভারতের বিজেপি, পাকিস্তানের well, সবাই, আমেরিকার রিপাবলিকানরা…এদের সবাই ডানপন্থী যারা মানুষের জীবনের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর তারা তাদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ধর্মকে।
পশ্চিমা দেশগুলোতে ধর্মের চেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় ধর্ম নিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ। এ কারণেই পশ্চিমা সভ্য দেশগুলোতে ডানপন্থীরা খুব কমই ক্ষমতাসীন হতে পারে। অথবা তাদের ডানপন্থীরাও আমাদের দেশের বামপন্থীদের চেয়ে বেশি প্রগতিশীল।
তবে, দেশে দেশে ডানপন্থীরা কিছু মৌলিক মানবাধিকারের বিরোধিতা করে থাকে। যেমন “Right to liberty and pursuit of happiness” কে গুরত্ব দেয়া আমেরিকান ডানপন্থীরা অভিবাসীদের pursuit of happinessকে পাত্তা দিতে চায় না। নারীদের গর্ভপাতের liberty দিতে চায় না। কারণ এ দুই কাজ, তাদের মতে, শ্বেতাঙ্গ ককেশীয়দের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে। ককেশীয়দের বিপরীতে ল্যাটিনদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। যদিও ল্যাটিনরা ককেশীয়দের চেয়ে বেশি কট্টর ধার্মিক, তারপরও ডানপন্থী আমেরিকানরা চায় না ল্যাটিনরা তাদের দেশে প্রবেশ করে নিজেদের সংখ্যা বাড়াক।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে হিন্দুরা মুসলিমদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত। তারা নিজেদের অনুসারীদের কাছে অধিকতর সন্তান জন্ম দিতে বলে যেন মুসলিমরা তাদের চেয়ে সংখ্যায় না বেড়ে যায়। এর ফলে তারা একে যেমন নারীদের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে, তেমনি সমকামীদেরও ধর্মীয় চাপে ফেলছে বাচ্চা জন্ম দিতে।
ইউরোপে আর আমেরিকায় একটা ব্যাপার ছিল, কনভার্সন থেরাপি নামে। এর কাজ হচ্ছে কাউন্সেলিং, হরমোন আর ওষুধের মাধ্যমে সমকামীদের সোজা করা। কারণ? তাদের ডিভাইন দায়িত্ব হচ্ছে বাচ্চা জন্ম দেয়া।
মুসলিম দেশগুলোর কথা না হয় বাদই দিলাম। সেখানে জন্মনিরোধক ব্যবস্থাকে কেউ গ্রহণ করে না। টিকাদান কর্মসূচিকে তারা পালন করে না। একেকজন ২ থেকে ১০টার বেশিও বাচ্চার জন্ম দিয়ে থাকে।
ধর্মগুলোর এই মারামারির গ্যাড়াকলে পরে পৃথিবীটা বাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে হয়ত অচিরেই। তাদের এই ডমিনেশনের চিন্তায় মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে নিয়মিত। যা হচ্ছেও। কেউ সমকামী হলে তাকে শাস্তি দেয়া হবে কারণ সে বাচ্চা নিতে “অক্ষম”।
অথচ পৃথিবীর অনাথ বাচ্চাদের একটা বড় অংশকেই দত্তক নেয় পশ্চিমা সমকামী দম্পতিরা। এদের জন্য উন্নত, সুন্দর জীবন নিশ্চিত করে। ধার্মিকরা একদিকে এসব করেন না, অন্যদিকে কাউকে করতেও দিবেন না। তাদের দরকার নতুন বাচ্চা, তাদের দরকার পরিসংখ্যানের ছক-কাটা কাগজে কালিতে লেখা সংখ্যায় বিজয়। এর মূল্য কত নিষ্ঠুর এসব জানার প্রয়োজন নাই তাদের।