বাংলাদেশের ধর্ম

বাংলাদেশ কিংবা এর অধিবাসীদের ধর্ম নিয়ে কথা বলতে এখন আসলে বিব্রত হতে হয়। মনে হয় একদল মূক, বধির আর অথর্বদের নিয়ে কথা বলছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে দেশে জন্ম সে দেশের এই কুরে কুরে মৃত্যু মেনে নিতে পারিনা। ফলে লিখতে হয়। বলতে হয়। আমার এই অক্ষমতা ক্ষমার যোগ্য নাকি অযোগ্য আমি জানিনা। জানতে চাইও না কিন্তু মনে হয় দায়িত্বের একটা সঙ্গায় আমাকে ফেলা যায়।

বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের এবং একক জাতিসত্ত্বা বাঙালির দেশটিতে মুসলমান না হওয়া এবং বাঙালি না হওয়া দুটোই অপরাধ। তবে রাষ্ট্রের কাছে বাঙালি না হওয়া ঘোরতর অপরাধ। আমাদের সংবিধানে এককালে রাষ্ট্রধর্মের বালাই ছিল না, এখন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকলেও ঠিক তার সাথে টীকা আকারে যুক্ত করা আছে যে- অন্য ধর্মের মানুষদের অধিকার রক্ষা করতে হবে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকলেও- ধর্মনিরপেক্ষতা নামের একটা অনুচ্ছেদও আছে- গোঁজামিল হোক আর যাই হোক- সকল ধর্মের জনগণকে একই দৃষ্টিতে দেখার কথা বলা আছে। কিন্তু, আমাদের এই সংবিধানে কোনকালেই বাঙালি ভিন্ন অন্য কোন জাতিসত্ত্বার স্বীকৃতি মেলে নাই।

আমাদের প্রগতিশীল বন্ধুদের সাধের ৭২ এর সংবিধানে এমএন লারমা আর সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত হাজার চেস্টা করেও বাংলাদেশের সকল জনগণের একক বাঙালি জাতিসত্ত্বার পরিচয় দূর করতে পারেননি। তারা স্বাক্ষরও করেননি। এরপরে জিয়া এসে বাঙালি জাতি দূর করে- সবাইকে বাংলাদেশী জাতি বানিয়ে দিলেন (অর্থাৎ অবাঙালি তো বটেই- বাঙালিরও জাতিসত্ত্বাও নাই হয়ে গেল)। শেখ হাসিনা আবার এসে সেটাকে জাতি হিসেবে বাঙালি, নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশী করে দিলেন। কিন্তু ঘুরেফিরে সেই চাকমা- মারমা- সাঁওতাল – গারো … রা সব অস্বীকৃতই থেকে গেলেন। তারা জাতি না, তাহলে কি? তারা উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী … ইত্যাদি।

যাইহোক, যেটা বলছিলাম- রমেল চাকমাদের অপরাধ কি? রাষ্ট্রের চোখে বড় অপরাধ তারা বাঙালি না। একই সাথে তারা আবার মুসলমানও না। দুইরকম অপরাধ তাদের। সমতলের বাঙালি- অমুসলিমরাও তো ভালো নেই। তবে, তারা কাগজে কলমে হলেও রাষ্ট্রের আশ্রয় পাবার অধিকার রাখে, তাদের উপর আক্রমণগুলো হয়- সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের হাতে- রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়- প্রশ্রয়ে ও হাতে … কিন্তু আক্রমণ চালানো সমাপ্ত হওয়ার পরে হলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গিয়ে হাজির হয়, নেতানেত্রীরা গিয়ে হাজির হয়, হাসিনা- খালেদা গিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে … রিলিফ পৌছে- ভাঙ্গা বাড়িঘর, মন্দিরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুনর্নির্মানের উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্র।

কিন্তু, যারা বাঙালি না- তাদের বেলায় এসবের কোন বালাই নাই। কোন আইন আদালত তাদের জন্যে প্রযোজ্য না। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সরাসরি বিচার করতে পারে। সরাসরি মেরে ফেলে লাশ গুম করা- পুড়িয়ে ফেললেও কারোর কোন বিকার নাই। ফলে, এই দেশে বাঙালি না হওয়ার মতো অপরাধ আর কিছু নাই।

আমার মনে হয় শেষ পর্যন্ত এই দেশে টিকে থাকবে কোর্তা আর টুপি পরা একদল পশু, একদল হায়েনার মত হাত পা ধারী মানুষ। কেব বলবে না, কেউ রুখবে না। সব কিছু ক্রমান্বয়ে ভেঙে পড়বে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *