খুনে দল আওয়ামীলীগ আর নীতি বিবর্জিত হেফাজতঃ দুইয়ে মিলে একাকার

বাংলাদেশের অবৈধ  প্রধানমন্ত্রীকে হেফাজতের পক্ষ থেকে যে সংবর্ধনা (কিংবা শোকরানা মাহফিল) দেয়া হয়েছে, এই পুরো ঘটনাতে যারা মর্মাহত হলেন, ক্রোধে আক্রান্ত হলেন কিংবা নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখালেন, আমি এই যায়গাতে যাবার আগে ব্যক্তিগত মতামত দিতে গিয়ে বলব, বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামীলীগের এমন বেঈমানির ইতিহাস নতুন নয়।

বাংলাদেশের রাজনীতি যারা প্রাক বাংলাদেশ পর্ব থেকে বিশ্লেষন করে আসছেন বা দেখে আসছেন তাঁদের জন্য এটা চোখে সয়ে যাওয়া একটা ঘটনা এবং এটার ফলাফলটাও খুব সম্ভবত এই প্রাজ্ঞজনদের জানা রয়েছে।

হেফাজত নিতান্তই একটা অশিক্ষিত, নির্বোধ, ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাওয়া একটি সংগঠন বা দল বা গোষ্ঠী। ফলে, মুক্তিযুদ্ধে যারা বিরোধীতা করতে গিয়ে অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছিলো তাদের পক্ষে এই সংগঠনটি কেন থাকবে এটা আমার যুক্তিতে মেলে না। কেননা কোরানে নাকি বলা রয়েছে ইসলাম ইনসাফের পক্ষে বলে। সুতরাং গন জাগরন মঞ্চের এই রাজাকারবিরোধী আন্দোলনের সময় এই সংগঠনটি ঠিক কেন নাস্তিক-আস্তিক ইস্যু নিয়ে এই গণ জাগরণ মঞ্চকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলো এটা আজও প্রশ্ন।

আমরা ধরে নিতে পারি এই খুনী হাসিনা আর তার অবৈধ সরকার এই আরেক বর্বর দল হেফাজতের একটা মর্চা এখন গঠিত হয়েছে। আর তারাই ব্লগারদের ম্রিয়মান করে দিয়েছে অনেক দিন ধরে। আর এই ম্রিয়মান হয়ে যাবার পেছনে ডি জি এফ আই কাজ করেছে, এন এস আই, ডিবি, র‍্যাব, পুলিশ সকলেই একত্রে কাজ করেছে বলে আমি মনে করি ফলে সরকার তেমন কোনো বিপদে পড়েনি। এটিকে এক প্রকার সাধুবাদ জানাতেই হয়।

শেখ হাসিনাকে আজকে হেফাজত যে সংবর্ধনা দিলো কিংবা যে তমিজ করলো এগুলো তো একদিনে হয়নি। হেফাজত প্রধান শফী ব্লগারদের খতম করবার দাবী জানিয়েছিলো। সেটি হয়েছে আনসারুল্লা বাংলা টিম নামে একটা দলের নাম সামনে এনে।

ব্লগার হত্যার সাথে সরকার যে পুরোপুরি জড়িত তথা সরকারের বিভিন্ন আইন শৃংখলা বাহিনী যে জড়িত, এটা বুঝবার জন্য আপনাকে রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হবে না। মাথায় একটু বুদ্ধি থাকলে কিংবা ছেলেবেলার পাটিগণিতের স্মৃতি মাথায় থাকলে এগুলো বুঝতে পারা সম্ভব। আই কিউ এস, আল কায়েদার বাংলাদেশ শাখা এসব ভুগোল বুঝিয়ে আমাদের যা-ই বলা হোক না কেন, সরকারের বুঝা উচিৎ সবাই বার্লি খায় না।

নাস্তিক ব্লগারদের একটা গোপন লিস্ট বানানো হয়েছে এবং একটা একটা করে কোপানো হয়েছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নাম করে। অভিজিৎ রায় গোপনে দেশে এলে সেটা জেনে যায় খুনীরা, কে কোন লেখা লিখেছে সেটা ছদ্ম নামেও বুঝে ফেলে খুনীরা, নগদের উপর খুন স্বীকার, দায় স্বীকার এগুলো করে ফেলে ফেসবুক ব্যবহার করে, টুইটার ব্যবহার করে কিন্তু ধরা পড়েনা। অথচ শেখ হাসিনার নামে এক শব্দ লেখা হলে সে আন্দামানে গেলেও ধরা পড়ে যায়। আমাদের এত বোকা মনে করবার কারন কি?

কারা কারা নাস্তিকতা বিষয়ক লেখালেখি করে এটা বের করতে ২০১৩ সালে ১৩ সদস্যের একটা টাস্কফোর্স্ক গঠন করা হয়েছিলো বিভিন্ন আইনী সংস্থাকে নিয়ে। আপনারা আমার এই তথ্য ব্যবহার করে একটু গুগল করবেন, বাকিটা আর বলে দিতে হবে না। আপনারাই বুঝবেন।

এতে করে ফলাফল হচ্ছে নির্বোধ ও মূর্খ শফী আর তার দলবল পুরোপুরি ঠান্ডা। ব্লগাররা যেদিন থেকে খুন হওয়া শুরু করেছিলো, সেদিন থেকে কি শফী’র একটা টু শব্দ আপনারা কেউ শুনেছেন? উত্তর হচ্ছে, শোনেন নি।

একই সাথে শফিকে আর তার ছেলেকে চট্রগ্রামের সরকারী প্রায় কয়েকশো বিঘা জমি দিয়ে দেয়া হয়েছে, অর্থ দেয়া হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে একোমোডেট করা হয়েছে। ফলে হেফাজতকে নিউট্রিলাইজেশন প্রক্রিয়ায় কোন রকমের ভুল হয়নি বা করা হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে।

প্রশ্ন যদি উঠে আসে যে এগুলো কেন করা হয়েছে? তাহলে এর উত্তরও সোজা। বাংলাদেশে নাস্তিকতা, ধর্ম নিয়ে সমালোচনা, সমকামিতা চিন্তা, সমকামিতার অধিকার, ধর্ম নিয়ে পালটা কথা বলবার অধিকার, চিন্তার অধিকার, এর প্রসার এগুলো ৯৫ পার্সেন্ট মুসলিম চরমতম পাপ কর্ম হিসেবে দেখেন। এমন একটা দেশে এই বড় জনগোষ্ঠীকে কেন খেপিয়ে তোলা হবে? রাজনীতিবিদেরা কেন নিজেদের পায়ে কুড়াল মারবেন? কয়টা নাস্তিক আছে বাংলাদেশে, এদের ভোট কি হেফাজতের মত বড়? হাতে গুনলে ৫ হাজার ধর্মে অবিশ্বাসী পাওয়া যাবে “হয়ত” দেশে।

হেফাজতের মত এমন বড় একটা ভোট ব্যাংক কনিয়ে আওয়ামীলীগ খেলবে, তাদের দলে টানবার সকল চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। রাজনৈতিক ভাবে চিন্তা করলে একজন বুদ্ধিমান রাজনীতিবিদ কখনোই তার ভোটের সাথে, ক্ষমতার সাথে বড় আদর্শের ধারকদের বিরুদ্ধে যাবেন না। যদি যেতেন তাহলে এটা হোতো খুবি নির্বোধের মত কাজ। শেখ হাসিনা নির্বোধ নন। তাঁর আইন শৃংখলাবাহিনী নির্বোধ নন। কারন শেখ হাসিনা একজন ঠান্ডা মাথার খুনী। তিনি জানেন কিভাবে কাকে বাগে রাখতে হয়।

হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ, আরজ আলী মাতুব্বর যে রকম রাষ্ট্র চেয়েছেন বা করতে চেয়েছেন আর সেই ধারায় প্রভাবিত হয়ে যে ব্লগার বা লেখকরা ধর্মে অবিশ্বাস করে কিংবা যে প্রগতিশীল অংশ ধর্মকে হ্রাস করে যে মানবিক রাষ্টের কথা বলেছেনঙ্কিংবা বলেন, এটা প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে অনেকে আওয়ামীলীগকে প্রতিভূ মনে করেন, নেতা মনে করেন কিংবা তাদের উপর আশাও দেখেন।

এই আশা দেখার যায়গাটাই ভুল। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ একটা ক্ষমতামুখী হিংস্র দল, তারা রাজনীতি করেন ক্ষমতায় যাবার জন্য। একটা আদর্শ ধরে সেটিকে প্রতিষ্ঠিত করবার কোনো রাজনৈতিক দল শুধু বাংলাদেশে কেন, সারা বিশ্বেই বিরল।

সমাজতন্ত্রের ডাক যারা দেন, কমিউনিজমের ডাক যারা দেন তারা অধুনা রাশিয়া বা সমসাময়িক আদর্শধারী দেশে গিয়ে এদের সিস্টেম এখন দেখে আসতে পারেন চাইলে। সব বদলে গেছে। এখন সময় কম্প্রোমাইজের, এখন সময় হচ্ছে একটু ছাড় দিয়ে নিজের আখের গোটানোর। হিসেব তো খুব সোজা।

ফলে, হাসিনা শফিকে পূর্বে তেতুল বলেছেন না জাম্বুরা বলেছেন এটা মুখ্য নয়। মুখ্য হচ্ছে নির্বাচনের ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে হাসিনাকে লক্ষ লক্ষ “তৌহিদি জনতা” সংবর্ধনা দিয়েছে শফীর নেতৃত্বে। এটাই হচ্ছে রেজাল্ট। এটাই ফলাফল।

আমি কেন এই কথা বলছি সেটা আপনারা টের পাবেন ইউ টিউবে হাসিনাকে দেয়া সংবর্ধনার ভিডিও গুলোর মন্তব্য গুলো পড়লে। সেখানে এখন হাসিনাকে ইসলামের সৈনিক ঘোষনা দিয়ে বার বার বলা হচ্ছে, এইবার লক্ষ্য ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। বাংলাদেশের রাজনীতি আরেকটু ঘনীভূত হলে আর হাসিনা তখনো এই দেশে রাজনীতি করতে থাকলে শুধু ক্ষমতার জন্য তাঁর হাত দিয়েই হয়ত এই দেশে ইসলামী প্রজাতন্ত্র কায়েম হবে। এটা তো কেবল শুরু। ফলে ঘটনা এখানেই শেষ, এই কথা বলা আহাম্মকি মাত্র।

আমি মানুষ ক্ষুদ্র হতে পারি কিন্তু রাজনৈতিক ভবিষ্যৎবাণী আমার মিথ্যে হয়েছে, এমন ব্যাপার খুব কম। আমার এই বক্তব্য আপনি মার্ক করতে রাখতে পারেন। নগর পুড়লে, দেবালয় কি রক্ষা পায়?

এই খুনে দল আওয়ামীলীগ বা বাম দলের নেতা কর্মীদের খেয়ে দেয়ে কাজ পড়েনি যে আমাদের এই স্বপ্ন পূরনে তারা কম্প্রোমাইজের রাজনীতি প্রত্যাহার করে আমাদের মত হয়ে উঠবেন।

যে দেশের একটি ভোট নির্ধারিত হয় এক কাপ চায়ের এদিক ওদিক করে, একটা বিড়ি বা একটা পান মুখে পুরে দিয়ে, সে দেশে আপনি হুমায়ুন আজাদ বা আহমদ শরীফের আদর্শে কিংবা সেক্যুলার রাষ্ট্র বিনির্মান করতে চান?

এই কারনেই আমি আমি আপনাকে অদূরদর্শী জনতা বলি সামনাসামনি। আর আড়ালে বলি মূর্খ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *