সমকামভীতি কী ফ্রি স্পিচ?

পশ্চিমা দেশগুলোতে ডানপন্থীরা সমকামীতার বিরোধিতা করে। তাদের মতে সমকামীতা পরিবারপ্রথাকে হুমকির মুখে ফেলে, এটি নৈতিকতা বহির্ভূত কাজ, এবং অসামাজিকতাকে উস্কে দেয়। সমকামীদের তারা নরকের ভয় দেখান, এবং তাদের জীবনকে নরক করে দিতে চান। 

 

তাদের ঘৃণাজীবিতাকে তারা বাকস্বাধীনতা বলেন। কিন্তু আসলে কি তা বাকস্বাধীনতা? বাকস্বাধীনতা আপনাকে যা ইচ্ছা বলার অধিকার দেয়। কিন্তু আপনি জার্মানিতে নাৎসিদের মত কথা বলতে পারবেন না। পারবেন না, কারণ নাৎসিদের ইতিহাস ঘৃণার ইতিহাস, ঘৃণিত ইতিহাস। তারা মানুষকে বিমানবিকীকরণ করত তাদের ভাষা দিয়ে। আর সেসব মানুষকে নিশ্চিহ্ন করতো। এটা আপনার বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না, আপনার মধ্যকার ঘৃণাকে দমিয়ে রাখার উপায়। 

 

আপনি আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের বর্ণবাদী শব্দ ব্যবহার করে ডাকতে পারবেন না। পারবেন না, কারণ শ্বেতাঙ্গরা এসব শব্দ দিয়ে নিজেদের “দাসদের” ডাকতো। যেসব “দাসদের” তারা অপহরণ করে এনেছিল আফ্রিকা থেকে। তাদের বাধ্য করেছিল অমানবিক পরিশ্রম করতে। তাদের বাধ্য করেছিল অসম্মতিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে। তাদের নির্যাতন করতো। আপনি তাদের ওসব শব্দ ব্যবহার করে ডাকতে পারবেন না। এটা আপনার বাকস্বাধীনতার হরণ না। বর্ণবাদী ইতিহাসকে স্বীকার করে সেসব ভুল আর না করার চেষ্টা। 

 

আপনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গণহত্যা অস্বীকার করতে পারবেন না। গণহত্যা অস্বীকার করা বাকস্বাধীনতা না। বাকস্বাধীনতা আপনাকে বলার অধিকার দেয়, মিথ্যা বলার অধিকার দেয় না। 

 

আপনি মিথ্যা সংবাদ প্রচার করতে পারবেন না। মিথ্যা প্রচারের অধিকার নিশ্চিত করে না বাকস্বাধীনতা। 

 

আপনি সহিংসতা উস্কে দেয়ার মত কিছু বলতে পারবেন না। আপনার বাকস্বাধীনতা আপনাকে সহিংসতা উস্কে দেয়ার অধিকার নিশ্চিত করে না। 

 

এবার দেখি সমকামীদের ব্যাপারে পশ্চিমা ডানপন্থীরা কী বলে। 

 

তারা বলে আমরা অনৈতিক জীবন যাপন করি। এ কথা মিথ্যা। একেকটা দেশ কিছু নৈতিকতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে। খুন করা যাবে- নৈতিকতা। চুরি করা যাবে না- নৈতিকতা। মিথ্যা বলা যাবে না- নৈতিকতা। সমকামীরা সেসব নৈতিকতা, এবং রাষ্ট্রের সকল নৈতিকতা যা কারো মানবাধিকার হরণ করে না, সেগুলো মেনে চলে। তো আমাদের জীবন নৈতিকতাহীন সেটা ভুল কথা, মিথ্যা কথা। আপনার বাকস্বাধীনতা আপনাকে মিথ্যা বলার অধিকার দেয় না। 

 

তারা আমাদের বিমানবিকীকরণ করা শব্দ ব্যবহার করে। তাদের বাকস্বাধীনতা কাউকে বিমানবিকীকরণ করার অধিকার দেয় না। 

 

তারা বলে আমরা সামাজিক বন্ধনকে নষ্ট করছি। এটাও সর্বৈব মিথ্যা কথা। সমকামী বিয়ে বিষমকামী বিয়ের তুলনায় কম ডিভোর্সে শেষ হয়। পরিসংখ্যানগত মিথ্যাচার এটি। বাকস্বাধীনতা আপনাকে মিথ্যা বলার অধিকার দেয় না। 

 

তারা বলে সমকামীতা পরিবারপ্রথাকে হুমকির মুখে ফেলে। সমকামীরা তো গাছের ফল না, তারাও সবার মত মানুষ, মানুষ থেকেই আমাদের জন্ম। আমাদের আবেগ আলাদা না। আমাদের স্বাদ আলাদা না। আমরাও সেসব জিনিসেই খুশী হই, কারও মৃত্যুতে শোকাহত হই, বৃষ্টি ভালোবাসি, শীতে গরম চা খেতে চাই। আমরাও কাচ্চি ভালোবাসি। আমরাও আমাদের বাবা-মাকে ভালোবাসি, পরিবারকে ভালোবাসি। পরিবারপ্রথা কীভাবে হুমকির মুখে যায়? তারা কী সেই লিঙ্গবৈষম্যমূলক পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা বলেন? এরকম প্রথা তো থাকাই উচিত না! 

 

সমকামভীতিকে বাকস্বাধীনতার রূপ দিয়ে সমকামবিরোধিতা বাদ দিয়ে মানুষকে মানুষ ভাবতে শিখুন।  

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *