সমকামীতা বিদ্বেষীদের মতে সমকামীতা প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে। প্রাকৃতিক নিয়মে যৌন সম্পর্কের লক্ষ্য হচ্ছে বংশবিস্তার। সে সুবাদে সমকামীতা নাকি প্রকৃতির নিয়মের লঙ্ঘন! এই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে বাংলাদেশের পেনাল কোডে। পেনাল কোডের ৩৭৭ ধারা মোতাবেক-
“যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে কোন পুরুষ,নারী বা জন্তুর সহিত, প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস করে সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা যেকোন বর্ণনার কারাদণ্ডে–যার মেয়াদ দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে-দন্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবে…”
এখন কথা হচ্ছে- “প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে” এর অর্থ কী?
আইনে এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্টকরণ নেই। What constitutes প্রাকৃতিক নিয়ম বিরুদ্ধ?
চশমা পরে যৌন সম্পর্ক প্রকৃতির কোথাও দেখা যায় না, চশমা পরে যৌন সম্পর্ক কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ না?
কনডমের ব্যবহার প্রকৃতিতে দেখা যায় না, কনডমের ব্যবহারে সেক্স কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ না?
ওরাল সেক্স প্রকৃতিতে নাই, ওরাল সেক্স কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ না?
হস্তমৈথুন প্রকৃতিতে দেখা যায় না, হস্তমৈথুন কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ না?
অর্থের বিনিময়ে যৌনকর্ম প্রকৃতিতে দেখা যায় না, অর্থের বিনিময়ে যৌনকর্ম কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ না?
বিয়ে বা বিয়ের মত সামাজিক বন্ধন প্রকৃতিতে অনুপস্থিত, বিয়ে করাও কি তবে প্রকৃতি বিরুদ্ধ?
এই প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে “না”। আধুনিক সমাজে আমরা এসব ব্যাপার মেনে নিয়েছি। কারণ এসব বিষয় আমাদের সমাজে চলে আসছে। প্রকৃতির দোহাই দিয়ে আমরা এগুলোকে বাদ দিয়ে দিচ্ছি না, কারণ এগুলো হবে নাগরিকের ব্যক্তিগত ব্যাপারে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ। অথচ প্রকৃতির দোহাই দিয়ে রাষ্ট্র আর সমাজ প্রতিনিয়ত যৌন সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রকৃতিবিরুদ্ধ মানে কি বংশবিস্তারের অক্ষমতা?
এটিও অযৌক্তিক একটি কথা। প্রতিটা যৌন সম্পর্ক থেকে বাচ্চার জন্ম হয় না। নারীদেহ যখন উর্বরা হয় তখনই কেবল যৌন সম্পর্ক থেকে বাচ্চা পাওয়া যেতে পারে। তাও নিশ্চিত না। তো অধিকাংশ যৌন সম্পর্কই কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ? না!
ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিরা কনডম, জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বানায়। এসবই তাহলে প্রকৃতি বিরুদ্ধ ধরা হবে? মোটেও না!
তাহলে?
শুধু সমকামীদের কাল্পনিক “প্রকৃতিবিরুদ্ধতা” সমস্যা, কিন্তু এই প্রকৃতিবিরুদ্ধতা কোনো সমস্যা নাই! কেন? এর কারণ কি শোষণ?