সমকামিতা, বন্ধুত্ব ও ধর্ম

আজ আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সমকামীরা বিয়ে করার বৈধতা পেলেন সকল স্টেট এ। এর আগে অনেকগুলো স্টেট সমকামীদের বিয়ের বৈধতা দিয়েছিল কিন্তু বেশীরভাগ স্টেট সেটা মেনে নেয়নি।

রক্ষনশীল পরিবারে এবং সমাজে বড় হওয়াতে আমার নিজেরও এই ব্যাপারে অস্বস্তি ছিল। ক্যালিফোর্নিয়াতে পি এইচ ডি লাইফে কিছু সমকামীর সাথে পরিচয় হয় আমার ক্যাম্পাসে। মারিও নামের এক মেক্সিকান ছেলের সাথে সকার খেলার সুত্রে বেশ ভাল বন্ধুত্ব হয়। চরম ভাল খেলত সে। একদিন থাকতে না পেরে তাকে বলেই ফেললাম আমার অস্বস্তির কথা, মনে আমার অনেক প্রশ্ন, কেমনে কি তোমাদের? তার উত্তর ছিল বেশ আবেগপ্রবন এবং বুদ্ধিদীপ্ত। অনেক কথার মাঝে কয়েকটা কথা আমার মনে দাগ কাটে।

“যখন কোন নরমাল কাপল দেখ তুমি তখন কি এটা তোমার প্রথম মনে হয় যে তারা কিভাবে সেক্স করে? নাকি এটা ভাব যে তাদের মনের মিল কতটা? তাহলে সমকামীদের দেখে তোমার সেটা কেন প্রথম মাথায় আসবে? আমরাও একজন আরেকজনের সান্যিধ্যটা বন্ধুত্বটাই উপভোগ করি। হ্যা, সেক্স যে কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ওটাই সব নয়। সেটা অনেক পরের ব্যাপার। তোমাদের মতই সম্পর্কের সুখ দুঃখ হাসি কান্না আমাদের আছে, হিংসা -বিদ্বেষ লোভ লালসাও আছে, কিন্তু জন্মগত ভাবেই কামনাটা অন্য লিঙ্গের ক্ষেত্রে অনুভূত হয় না, এটাকে কোন বিকৃতি ভেব না। কোন ওষুধে এটা সারে না। তোমার মতই আমার ধর্মেও এটা কঠিন শাস্তিযোগ্য। আমার মা আমাকে পাস্টর এর কাছে নিয়ে যায় আমাকে ঝাড় ফুক দিয়ে ভাল করার জন্য, আমার বাবা বলত আমি নাকি মেয়েদের কাছে পাত্তা পাই না তাই এসব বলছি, কিন্তু বিশ্বাস কর এসব কিছুই নয়। মেয়েদের সান্নিধ্য আমার কামনায় আসেনি ছোটবেলা থেকেই, বন্ধুদের সাথে পর্ণ দেখেও না। শেষমেষ আমার মা খালাত বোনকে অনুরোধ করে আমার সাথে প্রেম করার জন্য (মেক্সিকানদের ক্ষেত্রে এটা খুব কমন)। এক রাত কাটানোর পর আমার বোন আমাকে বলে পালাতে বাসা ছেড়ে, সারাজীবন অভিনয় করার কোন মানে হয় না। সেই প্রথম আমাকে কেউ সাপোর্ট দেয়, ওইটুকুই দরকার ছিল হয়ত। আমার প্রেমিক তখনো আমার জীবনে আসেনি। কিসের ভরসায় যে বেড়িয়ে পড়লাম কে জানে। ভাগ্যভাল ক্যালিফোর্নিয়াতে আমার সমমনা প্রচুর মানুষ ছিল। ওরাই আমাকে চাকুরি পাইয়ে দেয়, পড়াশুনাটা চালিয়ে যেতে সাহায্য করে (মারিও তখন ফিজিক্সে পি এইচ ডি করছিল)। তাছাড়া আমি এখন যার সাথে আছি সে আমাকে খুবই ভাল বোঝে, আমরা খুব সুখে আছি। জান আমি এটাই বুঝে পাই না যদি সমকামিতা এতই খারাপ হবে তাহলে খোদা আমাকে এভাবে কেন তৈরী করল। কেন সবগুলো ধর্মেই আমাদেরকে এত খারাপ ভাবে পরিচয় করা হয়েছে, কেন আমাদের মারতে বলেছে? এটা কি আমার ব্যাক্তিগত বিষয় নয়? আমরা তো কারো কোন ক্ষতি করি না, লুকিয়ে লুকিয়ে চার্চে গিয়ে এখনো প্রার্থনা করি। ঈশ্বর যেন আমাদের ক্ষমা করেন। আমাদের আয় খুব বেশি নয় কিন্তু এর মাঝেই সাধ্যমত যা পারি দান করি। এখানে কত মেক্সিকান না খেয়ে থাকে, ওরা চিকিৎসা পায় না, ওষুধ পায় না। ওদেরকে রোববারে আমরা সাহায্য করি, এগুলোর কি কোন মুল্য নেই তার কাছে? তোমার কথাই ধর তোমাকে শেখানো হয়েছে আমরা খারাপ, কখনো কি যাচাই করে দেখেছ আমরা কেমন? আমি খুব খুশি হয়েছি যে তুমি আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করে বসেছ। আর দশটা মানুষ তার বেডরুমে কি করে সেটা নিয়ে তো কেউ মাথা ঘামায় না, কতলোক তার বৌকে পেটায়( এটাও নাকি মেক্সিকান পরিবারে কমন), সেটা নিয়ে তো কেউ কথা বলে না, আমি বেডরুমে কি করলাম না করলাম এটার জন্য যদি খোদা আমাকে শাস্তি দেয় দিবে, তাতে তোমার কেন মাথা ব্যাথা। আমি এখানে শুধু তোমার কথা বলছি না, গোটা সমাজের কথা বলছি। কেন লোকে আমাদের শান্তিতে থাকতে দেয় না, রাষ্ট্রিয় আইনগুলো আমাদের স্বিকৃতি দেয় না, চার্চ আমাদের ঢুকতে দেয় না, আমাদের প্রতি এই ঘৃনাটার আমি কোন যুক্তি খুঁজে পাই না।”

আমি কোন উত্তর দিতে পারি না মারিও এর কথার। আমাদের বন্ধুত্বটা শেষ পর্যন্ত ছিল, যদ্দুর জানি সে ইন্টেল এ জয়েন করেছিল পাস করার পরে। আমি পাস করে মিশিগানে চলে আসি জেনারেল মটরস এ চাকুরি নিয়ে, তাই আর দেখা হয়নি ওর সাথে আর। আজ আমার খুব মারিওর কথা মনে পড়ছে, আর মনে পড়ছে তিরমিজি শরীফের একটা হাদিস। (কোরানে ৭ টা জায়গায় আছে ওদের কথা 7:80–84, 11:77–83, 21:74, 22:43, 26:165–175, 27:56–59, and 29:27–33)
Whoever is found conducting himself in the manner of the people of Lut, kill the doer and the receiver. – Tirmidhi 1:152
কিন্তু আমি মনে হয় পারব না সেটা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *